১৯৫০ সালের মারকানার কষ্ট নিয়ে প্রতিটি ব্রাজিলিয়ান ঘুরে ফিরে কারন ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক ব্রাজিল ও উরুগুয়ে। বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ফাইনাল এটি। ব্রাজিলীয়দের জন্য এই ফাইনাল ছিল এক ট্র্যাজিক অধ্যায়। ১ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে ফাইনাল খেলতে নেমে শিরোপা জয়ের জন্য ব্রাজিলের প্রয়োজন ছিল কেবল ড্র। রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারকানা স্টেডিয়ামে এক লাখ ৭৪ হাজার দর্শক সেদিন ফুটবল মাঠে গিয়েছিল উৎসব করতে করতেই। তৎকালীন ব্রাজিলের তুখোড় ফর্মের কাছে উরুগুয়ে খরকুটোর মতো উড়ে যাবে, এমন ধারণাই ছিল সবার। খেলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ব্রাজিলের একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে উরুগুয়ে। প্রথমার্ধ জুড়েই অ্যাদেমির, জিজিনহো ও জাইর ত্রয়ীর আক্রমণ ঠেকাতে নাকাল হতে থাকে উরুগুয়ে। উরুগুয়েন গোলরক্ষক গাস্তন ম্যাসপোলির অসাধারণ নৈপুণ্য সেদিন উরুগুয়েকে অন্তত পাঁচটি নিশ্চিত গোলের হাত থেকে রক্ষা করে। দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে ব্রাজিল অবশেষে উরুগুয়ের গোলমুখ খুঁজে পায়। অ্যাদেমির ও জিজিনহোর সমন্বয়ে একটি পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে গোল করেন অ্যাদেমির। মারকানা স্টেডিয়ামের উৎসব যেন নতুন মাত্রা পায় সেই মুহূর্তে। গোল করেও একের পর এক আক্রমণ করে যেতে থাকে ব্রাজিল। আক্রমণ করতে করতে ক্লান্ত ব্রাজিল দলের ফাঁক-ফোকর বের করে বুদ্ধিদীপ্ত প্রতি আক্রমণ শুরু করে উরুগুয়ে। খেলার ৬৬ মিনিটের সময় সমতা ফিরিয়ে আনে উরুগুয়ে। ব্রাজিলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় বিগোদের একটি ভুলে ঝিজিয়া মুহূর্তের জন্য থমকে দেন মারকানা স্টেডিয়ামকে। পরক্ষণেই আবার প্রাণ ফিরে আসে স্টেডিয়ামে। কারণ দর্শকেরা জানত, একটি ড্র-ই ব্রাজিলের শিরাপা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বিধি বাম। খেলার ৭৯ মিনিটের সময় সেই ঝিজিয়াই মারকানাতে প্রেতপুরীর নিস্তব্ধতা নামিয়ে আনেন উরুগুয়েকে ২-১ গোলে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে। বাকি ১১ মিনিটে ব্রাজিল আরও কয়েকটি আক্রমণ করেও কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায়নি। রেফারি খেলার শেষ বাঁশি বাজালে শোকস্তব্ধ মারকানা স্টেডিয়ামের লাখ লাখ দর্শক কান্নায় ভেঙে পড়ে, কয়েকজন তো এই দুঃখ সইতে না পেরে মারকানার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহননের পথই বেছে নেয়।
শিরোপা জয়ের ব্যাপারে ব্রাজিল এতটাই নিশ্চিত ছিল যে ফাইনালের পরের দিন দেশটিতে সরকারিভাবে আগাম ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই ছুটি ব্রাজিলীয়রা কাটিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এ রকম শোকের আবহ দেশটিতে আগে কখনো দেখেনি কেউ। ফাইনালের পরের দিন পুরো ব্রাজিল ছিল শোকস্তব্ধ, নীরব, নিথর। সেই দিনটির সাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকা প্রবীণেরা আজও শিউরে ওঠেন ফাইনাল-পরবর্তী ব্রাজিলের কয়েকটি দিনের কথা মনে করে।
দ্বিতীয়বার যখন ব্রাজিলে বিশ্বকাপ আয়োজন করে
করে তখন সবাই চেয়েছিল ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়ে মারকানার দুঃখ দুর করবে কিন্তু জার্মানির সাথেই সেই বিশাক্ত হার। দুঃখ যেন বয়ে চলছে এবং প্রজন্মের থেকে প্রজম্ম। ব্রাজিল হয়তো অনেক ট্রফি জিতবে কিন্তু নিজের দেশে এই দুই পরাজয় মনের মাঝে কাটা হয়ে বসে আছে।