Sunday, October 15, 2017

এথলেটিক মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা ম্যাচ রিভিউ by Monjurul Islam

ম্যাচ রিভিউ
বার্সেলোনা - অ্যাতলেটিকো
গোল:সাউল,সুয়ারেজ

লা লিগায় অষ্টম ম্যাচে এসে টানা জয়ের ছন্দপতন ঘটল। অষ্টম রাউন্ড শেষে ২২ পয়েন্ট নিয়ে অবশ্য শীর্ষেই আছে বার্সেলোনা। এটিএমের নতুন মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানো ষ্টেডিয়ামে এটিএমের বিপক্ষে - গোলে ড্র করে মাঠ ছাড়ে। ঘরের মাঠে এটিএম যে কোন দলের জন্য সব সময় কঠিন প্রতিপক্ষ এটা সবার জানা। লা লিগার সেরা ডিফেন্সিভ টিম তারা। তার উপর ওদের রাফ ফুটবল তো আছেই যেটা প্রতিপক্ষের স্বাভাবিক খেলা নষ্ট করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটিএমের মাঠ থেকে ড্র করাটা খুব খারাপ রেজাল্ট বলা যাবে না। তবে জয় নিয়ে ফিরতে দারুন হতো। শিরোপার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যেত। কেননা বড় দলগুলোর সাথে পয়েন্ট যত কম হারাবে ততই শিরোপা জিতার সম্ভাবনা বাড়বে। অবশ্য লিগ এখনো অনেকদুর বাকি। এখনো অনেক কিছুই হতে পারে। যারা সারা বছর ভাল খেলবে তারাই লিগ জিতবে। এটিএমের নতুন মাঠ যেখানে বার্সা আগে খেলেনি আর আজ তো এটিএমের দর্শকরাও একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। বার্সার কেবল ৩০০ এর মত দর্শক ছিল। কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার ইস্যুকে কেন্দ্র করে বার্সার দর্শকদের টিকেট দেয়নি। যারা কেবল অনেক আগে থেকে টিকেট কেটে রেখেছিল তারাই ছিল শুধু। এত বড় মাঠের গ্যালারিতে বার্সার এই গুটিকয়েক দর্শকদের খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এটিএমের দর্শকরা সারাক্ষণ চিৎকার করে ষ্টেডিয়াম মাতিয়ে রেখেছিল। পিকে কে তো বার বার ভু ধ্বনি দিয়ে তাতিয়ে দিচ্ছিল এটিএমের দর্শকরা। তবে এসব কোন কিছুই শেষ পর্যন্ত বার্সার বাঁধা হতে পারে নি।

ম্যাচের আগেই কোচ ভালভার্দের একাদশ ফর্মেশন দেখে জাস্ট বিরক্ত হয়েছি। গোমেজ কে কেন যে প্রথম একাদশে সুযোগ দিলেন বুঝে আসে না। তার উপর যখন দেখলাম তাকে রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলাবে তখন তো রীতিমত চোখ কপালে উঠেছে!! গোমেজকে মিডে খেলালেও এতটা খারাপ করতো না। ইদানিং ভালভার্দের এসব এক্সপেরিমেন্ট দেখতে আর ভাল লাগে না মোটেও। কেন প্রতি ম্যাচে নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট করা লাগবে?? এতে প্লেয়ারের স্বাভাবিক খেলা নষ্ট হয়। যে যেখানে খেলতে অভ্যস্ত তাকে তো সেখানেই খেলানো উচিত।

ম্যাচের শুরু থেকে অ্যাতলেটিকো বার্সার উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। এটিএমের কাউন্টার আক্রমনগুলো বার্সার ডিফেন্স কে বার বার পরীক্ষায় ফেলছিল। প্রথম ১৫ মিনিটে গ্রিজম্যানের অসাধারন দুটো শট ঠেকিয়ে বার্সাকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখে আমাদের জার্মান ওয়াল স্টেগান। বার্সার পায়ে বল থাকলেও আক্রমনে গিয়ে বার বার হতাশ হচ্ছিল। এটিএমের জমাট বাঁধা রক্ষনে আক্রমনগুলো নষ্ট হচ্ছিল। ম্যান টু ম্যান মার্কিং আর ডি বক্সের সামনে থেকে শট ব্লক করে বার্সার আক্রমনের ধার নষ্ট করছিল। ২১ মিনিটে কারাস্কোর পাস থেকে ডি বক্সের বাইরে থেকে অসাধারন এক গোল করে এটিএমকে লিড এনে দেয় সাউল। স্টেগানের কিছুই করার ছিল না যদিও ঝাপিয়ে সাধ্যমত চেষ্টা করেছে বল সেভ করতে। মুলত ম্যান মার্কিং ভুলের কারনেই গোলটা খায় বার্সা। আর আসলে একটা প্লেয়ার ডি বক্সের বাইরে থেকে দু তিনজনের ফাঁক থেকে এত চমৎকার শটে গোল করলে বিপক্ষ দলের সেটাতে কিছু করার থাকে না। গোল খেয়ে বার্সা গোল শোধে মরিয়া হয়ে উঠে। আক্রমনে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করে। বাট খেলা ঠিক বার্সার মত মনে হচ্ছিল না। বার বার বার্সার পা থেকে বল কেড়ে নিচ্ছিল এটিএমের প্লেয়াররা। প্রচুর ভুল পাস হচ্ছিল সাথে এটিএমের রাফ ট্যাকেল খেলাটা বেশ কঠিন করে তুলেছিল। প্রথম হাফের বাকী সময়ে বার্সা কিছু আক্রমন করলেও গোলের দেখা পায় নি। এক্ষেত্রে এটিএমের ডিফেন্স লাইনকে বাহবা দিতেই হবে। ডি বক্সের সামনে বার্সার প্লেয়ারকে কোন স্পেস দিচ্ছিল না। মেসিকে অলটাম মার্কিএ রাখছিল। সাথে শট নিতে গেলেই ব্লক তৈরি করছিল। সব মিলিয়ে ওদের টিম ওর্য়াক আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে। নিজেদের ডিফেন্স এতটা দারুন ভাবে সামাল দিয়ে আবার পাল্টা আক্রমনে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে নাজেহাল করাটা বোধহয় এটিএমের চেয়ে ভাল আর কেউ পারে না। এজন্যই মেবি তাদেরকে লা লিগার সেরা ডিফেন্সিভ টিম বলা হয়। আর এই কাজের ক্রেডিট ওদের কোচ সিমিওনের। সিমিওনে আসলেই একটা জিনিস। আহামরি কোন তারকা ছাড়াই দলটাকে এতটা গুছিয়ে খেলাতে পারেন বলা বাহুল্য।

দ্বিতীয় হাফের শুরু থেকে বার্সা আক্রমনে বেশ মনোযোগী হয়। গোল শোধে মিনিটে মিনিটে আক্রমনে নাজেহাল করতে শুরু করে এটিএমের ডিফেন্স লাইনকে। ৫৬ মিনিটে ডি বক্সের একটু বাইরে থেকে নেয়া মেসির অসাধারন ফ্রিকিক ডান পোস্টে লেগে ফিরে আসলে বার্সার হতাশা বাড়তে থাকে। আক্রমন করেই যাচ্ছিল বাট গোলের দেখা পাচ্ছিল না। মেসির অসাধারন আরেকটা নিচু শট বারের সামান্য কোল গেসে বাইরে চলে যায়। ৬১ মিনিটে ইনিয়েস্তার জায়গায় দেউলোফিউ সেমেদোর জায়গায় রবার্তোকে মাঠে নামান ভালভার্দে। মুলত এর পরেই বার্সার আক্রমনের গতি বাড়ে। আগের চাইতে এই সময় বার্সাকে বেশ শক্তিশালী মনে হয়েছে। খেলায় খুব গতি এসেছিল। আক্রমনের পর আক্রমনে এটিএমের ডিফেন্সকে সারাক্ষন ব্যস্ত রাখছিল। কিন্তু গোল কিছুতেই দেখা দিচ্ছিল না। বার বার এটিএমের ডিফেন্স কিপারের দৃঢতায় আর বার্সার ভুলে গোল মিস হচ্ছিল। ৭৯ মিনিটে রাকিটিচের বদলি হিসেবে মাঠে নামে পাওলিহো। অবশেষে ৮১ মিনিটে রবার্তোর ক্রসে অসাধারন হেডে গোল করে বার্সাকে সমতায় ফেরান সুয়ারেজ। মাটিতে ড্রপ দিয়ে দারুন বুদ্ধিদীপ্ত হেড করে এটিএমের কিপারকে পরাস্ত করেন। সেই সাথে অনেকদিন পর বার্সার হয়ে গোলে ফিরলেন আমাদের কিলার। এর একটু পর গোমেজের চমৎকার বাড়ানো বলে একটুর জন্য পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হয় সুয়ারেজ। পা লাগাতে পারলেই নিশ্চিত গোল হতো সেটা আর তখন  বার্সাও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত। শেষ পর্যন্ত - গোলেই খেলা শেষ হয়। 

প্রথম হাফের চাইতে দ্বিতীয় হাফে বার্সা অনেক ভাল খেলে। বিশেষ করে লাস্ট ২০-২৫ মিনিট আক্রমনের জোয়ার তুলেছিল। এটিএমের ডিফেন্স কিপারের কিছু দারুন সেভে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে নি বার্সা। পুরো ম্যাচে বার্সার অনেকগুলো ভুল চোখে পড়েছে। অনেকবার পা থেকে বল হারিয়েছে,ভুল পাস করেছে,দু একটা ইজি গোলের চান্স মিস করেছে। পুরো ম্যাচে আমাদের স্টেগান অসাধারন ছিল। দু তিনটা অবিশ্বাস্য সেভে বার্সাকে ম্যাচে টাকিয়ে রেখেছিল। ডিফেন্সে উমতিতির পারফরমেন্স নজর কেড়েছে অন্যদের চেয়ে। বুসকেটস বরাবরের মত দারুন ছিল। সুয়ারেজ একটা ইজি গোল মিস করলে পুরো ম্যাচে দারুন খেলেছে। সবচেয়ে বড় কথা ওর গোলে ফেরাটা আমাদের জন্য দারুন স্বস্তিদায়ক।


এটিএমের মাঠে ৬১% বল পজিশন রাখাটা চাট্টিখানি কথা না। হয়তো প্রথম হাফে অনেক অগোছালো ছিল বার্সা বাট দ্বিতীয় হাফে দারুন ফুটবল খেলেছে। এটিএমের টাইট ফিট ডিফেন্স ভাগ্য সহায় না হওয়ার কারনে জয় পাওনা হয় নি। যদিও জয় আশা করেছিলাম তবু এটিএমের মাঠ থেকে ড্র করাটা খুব একটা খারাপ রেজাল্ট বলা যাবে না। জিতলে শীর্ষস্থানটা আরেকটু পাকাপোক্ত হতো বাট এখনো আমরা শীর্ষেই আছি। সো এত টেনশন আর হতাশ না হয়ে আপাতত সামনের ম্যাচের প্রস্ততি নেয়াটাই বেটার...



Related Posts:

  • LaLiga Top Assists | Match Day 21 | LaLiga Top Assists: 01. Toni Kroos- 09 02. Pablo Piatti- 07 03. Neymar Jr.- 07 04. Daniel Parejo- 05 05. Pablo Sarabia- 05 … Read More
  • Premier League Top Scorers | Match Day 24 Premier League Top Scorers: 01. Romelu Lukaku- 16 02. Alexis Sanchez- 15 03. Zlatan Ibrahimovic- 15 04. Diago Costa- 15 05. Jerman Defoe- 14 … Read More
  • ফ্রেংক পুস্কাস By: Saimon Rasel ১৯২৭ সালের ২ এপ্রিল হাংগেরীর বুদাপেস্টে জন্ম নেন ফ্রেংক।হাংগেরিতে জন্ম নিলেও, সে ছিল একজন জার্মান। জার্মানি সোয়াবিয়া থেকে তার পরিবার পুস্কাসের জন্মের পূর্বেই স্থানতরিত হয় হাংগেরীতে।১৯৪৩ সালে, কিসপেস্ট এসির হয়ে নিজের ইয়ুথ ক্য… Read More
  • Premier League Top Assists | Match Day 24 Premier League Top Assists: 01. Kevin De Bruyne- 09 02. Matihew Phillips- 08 03. Christian Eriksen- 07 04. Alexis Sanchez - 07 05. Gylfi Sigurdsson- 07 … Read More
  • The trophy for the Best FIFA Football Awards 2016.             OFFICIAL: The trophy for the Best FIFA Football Awards 2016 has been released. বেষ্ট প্লেয়ার  এওয়ার্ড এর ট্রপি রিলিজ করেছে ফিফা। ২০১৬ সালে বেষ্ট প্ল… Read More

0 comments:

Post a Comment